কর্মব্যস্ত নগরে জীবনযাত্রার ব্যয় গ্রামের তুলনায় বেশি; তাই ব্যয় বৃদ্ধির হারও বেশি। তবে বাংলাদেশে যেন উল্টো চিত্র। শহরের তুলনায় গ্রামেই জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে। এমন বাস্তবতায় পল্লি জনগোষ্ঠীকে স্বস্তি দিতে বাজার ব্যবস্থাপনায় বৈষম্য কমানোর তাগিদ অর্থনীতিবিদদের।
সরকারিভাবে নানা পদক্ষেপ নেয়ার পরও ঠেকানো যাচ্ছে না নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি। মূল্যস্ফীতির প্রভাবে গ্রামে জীবনযাত্রার ব্যয় শহরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। শুধু তাই নয়, গ্রামে এ ব্যয় বাড়ার হার ছাড়িয়েছে শহরকেও।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, অক্টোবর মাসে গ্রামে খাদ্যমূল্যস্ফীতির হার শহরের তুলনায় বেশি ছিল। যদিও গ্রামই খাদ্যের প্রধান যোগানদাতা। অন্যদিকে, খাদ্যবর্হিভূত পণ্য ও সেবা গ্রামের ভোক্তারা কম গ্রহণ করলেও এ খাতের মূল্যস্ফীতি তাদের বেশি ভোগাচ্ছে।
অক্টোবরে মূল্যস্ফীতির চিত্র বলছে, গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি পৌঁছেছে ১১.২৬ শতাংশে। এর মধ্যে খাদ্যমূল্যস্ফীতি ১২.৭৫ শতাংশ ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯.৭৬ শতাংশ। আর শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি পৌঁছেছে ১০.৪৪ শতাংশে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১২.৫৩ শতাংশ, আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯.০৬ শতাংশ।
পল্লি অঞ্চলের মানুষরা জানান, ভালো কোনো মাছ-মাংস খেতে অন্তত ৫০০-৬০০ টাকা খরচ পড়ছে। পাশাপাশি বেড়ে গেছে অন্যান্য খরচও। এতে সংসার চালাতে প্রায় সবারই হিমশিম অবস্থা।
অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তাফা কে মুজেরি বলেন, “শহরে পণ্যের দাম বাড়লে হৈচৈ পড়ে যায়। ব্যবস্থা নেয় সরকার। কিন্তু গ্রামে তার ছিটেফোঁটাও নেই। ফলে কষ্টে দিন কাটান গ্রামাঞ্চলের মানুষ।”
খাতভিত্তিক মূল্যস্ফীতির তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পোশাক-পরিচ্ছদ, বিনোদন ও আসবাবপত্র ছাড়া বাকি ৫টি খাতে শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মত খাতগুলোতে খরচ বাড়ার হার শহরের তুলনায় গ্রামে বাড়ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, পণ্যের সমবণ্টন করা না গেলে, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ওপর চাপ কমানো সম্ভব নয়।
ড. মুস্তাফা কে মুজেরি বলেন, “গ্রাম ও শহরের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্যগুলো দূর করতে হবে। তা নাহলে তারা অবহেলিতই থেকে যাবে।”
মূল্যস্ফীতির হার কমাতে শুধু সুদহার বাড়ানোই সমাধান নয়; বরং বাজারে শৃঙ্খলা ফেরানোসহ রাজস্ব ও মুদ্রানীতি সমন্বয়ের পরামর্শ এ অর্থনীতিবিদের।
আপনার মতামত লিখুন :