বিশ্ব ইজতেমায় তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর উপস্থিতিসহ পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে তাঁর অনুসারীদের পক্ষ থেকে। আজ বুধবার (৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘দাওয়াত ও তাবলিগের উলামায়ে কেরাম ও সাধারণ সাথীবৃন্দ’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
দাবিগুলো হলো-
১. বিশ্ব ইজতেমায় তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
২. বিগত সাত বছরের বৈষম্য দূর করে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব নিজামুদ্দীন মারকাজের অনুসারী মূলধারার তাবলিগি সাসিদের বুঝিয়ে দেওয়া।
৩. কাকরাইল মসজিদ ও বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের বৈষম্য দূর করে তাবলিগের মূলধারার সাথিদের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া।
৪. ২০১৮ সালের ১লা ডিসেম্বর টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে মূলধারার দুইজন সাথিকে হত্যা ও পরবর্তী সময়ে কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ঢাকা নিউ মার্কেটে তিনজন সাথিকে হত্যা ও চার শতাধিক সাথিকে মারাত্মক আহত করার দায়ে জুবায়ের পন্থীদের নামে দায়ের করা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা। এবং
৫. সারা বাংলাদেশের সব মসজিদে ধর্মীয় উসকানি ও ভাইয়ে ভাইয়ে সংঘাত সৃষ্টি হয়- এমন বক্তব্য নিষিদ্ধ করা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কাকরাইল মসজিদের খতিব আজিম উদ্দিন বলেন, দাওয়াতে তাবলিগ বিশ্বব্যাপী একটি অরাজনৈতিক, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ সংগঠন। এ দাওয়াতি কার্যক্রমের মাধ্যমে লাখো কোটি মানুষ ইসলামের পথে এসেছেন এবং হেদায়েত লাভ করেছেন। বিশ্বব্যাপী এই দাওয়াতি সংগঠনের বাৎসরিক সম্মেলন বা বিশ্ব ইজতেমা প্রায় ৫৭ বছর ধরে টঙ্গীর তুরাগতীরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
আসন্ন বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে একটি চিহ্নিত মহল দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তথাকথিত ‘জুবায়েরপন্থী’ তাবলিগের একটি বিচ্ছিন্ন অংশ দেশের কতিপয় উলামায়ে কেরামকে বিভ্রান্ত করে ও মাদরাসার কোমলমতি ছাত্রদের ব্যবহার করে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে।
তিনি বলেন, গত ৫ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের আয়োজিত প্রোগ্রাম থেকে অসংখ্য অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। অথচ আমরা ৩ নভেম্বর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের আলেমদের ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছি। তবে জুবায়েরপন্থীদের উসকানিতে কতিপয় অদূরদর্শী আলেম আপসমূলক সমাধানে না এসে তাবলিগ ও বিশ্ব ইজতেমার ইস্যুতে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছেন এবং পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার হীনচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমরা জাতির সামনে বিষয়টি স্পষ্ট করার লক্ষ্যে সমাধানমূলক প্রস্তাব পেশ করছি। তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির সাদ কান্ধলভী ও নিজামুদ্দীন মারকাজের অনুসারী তাবলিগ জামাত সম্পর্কে যে অসত্য ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে, তা নিয়ে সাতটি শর্তের ভিত্তিতে ওপেন চ্যালেঞ্জের প্রস্তাব দিচ্ছি।
১. দারুল উলুম দেওবন্দের মাওলানা আরশাদ মাদানী ও পাকিস্তানের শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকি উসমানীসহ ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ আলেমরা বিচারক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
২. সরকারের উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
৩. গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন এবং এটি রেকর্ড ও সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
৪. সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
৫. উভয় পক্ষের নির্দিষ্ট প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
৬. বিতর্কটি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে।
৭. বিচারকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
তিনি বলেন, আমরা ঘরোয়া বৈঠকে বসে সব সমস্যার সমাধান করতে চাই। কিন্তু আগের সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে জুবায়েরপন্থীরা অতিরিক্ত উৎসাহ নিয়ে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে বৈঠক করে টানা সাত বছর প্রথম পর্বে ইজতেমা করার সুযোগ করে নিয়েছেন। অথচ তারা বর্তমান সরকারের বিরোধিতা করে ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠককে উপেক্ষা করে রাজপথে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :