পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে পৃথিবীর মানুষকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করার জন্য, মানুষকে সভ্য ও ভদ্র বানানোর জন্য। আর অধিকার আদায় কোরআনুল কারিমের গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। সুরা নিসায় নারীদের বিভিন্ন অধিকারের আলোচনা বেশি করা হয়েছে, তাই এ সুরার নাম নিসা রাখা হয়েছে। নিসা অর্থ নারী। এ সুরায় নারীদের বৈষয়িক নানা অধিকার যথা বিয়ে, সম্পত্তি, মোহর ও উত্তরাধিকার সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এসব নীতি সমাজের গরিব-ধনী সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এ সুরায় ঘোষিত হয়েছে, এতিম মেয়ে শিশুর সম্পদের অধিকারের বিষয়ে। এ ছাড়া বিয়ের ক্ষেত্রে তার যে স্বাধীনতা ও অধিকার সেটাও দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করা হয়েছে।
এ সুরায় সুস্পষ্ট ভাষায় নারীদের বিভিন্ন অধিকার নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। মৃত আপনজনের সম্পদে নারী কতটুকু অংশ পাবে, তা এ সুরায় পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে। স্বামীর সংসারে নারীর প্রাপ্য অধিকার কতটুকু ও কী কী সেটা নির্ধারণ করে দিয়ে নারীদের ঠকানোর পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এ সুরায়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হলে, সম্পর্ক তিক্ত হলে কীভাবে সেটার সমাধান করতে হয়, সেটাও শিখানো হয়েছে সুরা নিসায়।
ইসলামপূর্ব অন্ধকার যুগের মানুষ নারীকে ঠকাত। নারীর ওপর নানাবিধ জুলুম করত। নারীর ব্যক্তিত্ব ও সম্পদ কুক্ষিগত করার জন্য বিভিন্ন ফন্দি আঁটত। সুরা নিসায় আলোচিত ও বর্ণিত বিভিন্ন বিধানের মাধ্যমে এসবের দরজা চিরতরে রুদ্ধ করা হয়েছে। নারী নির্যাতন রোধে ও নারীদের অধিকার আদায়ের নিমিত্তে পৃথিবীতে উচ্চারিত প্রথম সনদের নাম সুরা নিসা। বিশ্ববাসীকে নারী অধিকারের ধারণা দিয়েছে এ সুরা। পৃথিবীতে নারী মুক্তি, নারী উন্নয়ন আর নারী অধিকারের পথচলা শুরু হয়েছে সুরা নিসার পথ ধরে। এ বিষয়ে সুরা নিসার অবদান পরিপূর্ণভাবে অনুধাবন করতে হলে, সুরা নিসা অধ্যয়ন করার আগে তদানীন্তন বিশ্বে নারীর মর্যাদা, সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে জানতে হবে।
এ সুরার প্রথম আয়াতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বের সব মানুষের মধ্যে সুবৃহৎ ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধন স্থাপন করার মূলমন্ত্র শেখানো হয়েছে। দ্বিতীয় আয়াতে এতিমের সম্পদ আত্মসাতের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে এবং এতিমের অভিভাবককে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। দশম আয়াতে এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ পরকালে ভয়ংকর পরিণতির কারণ হবে বলে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এগারোতম আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, কেউ মারা গেলে তার সন্তানরা বিশেষ করে মেয়ে সন্তানরা কতটুকু অংশ পাবে এবং তার মা-বাবা কতটুকু অংশ পাবেন। বারোতম আয়াতে আছে, স্বামী মারা গেলে স্ত্রী কতটুকু অংশ পাবে আর স্ত্রী মারা গেলে স্বামী কতটুকু অংশ পাবে। সেই সঙ্গে বলে দেওয়া হয়েছে, বৈপিত্রেয় ভাইবোনের অংশও।
তওবার আলোচনা করা হয়েছে এ সুরার সতেরো ও আঠারোতম আয়াতে। এর পরের আয়াতে নারী নির্যাতন ও নারীর প্রতি সদাচরণ বিষয়ে নানা আলোচনা স্থান পেয়েছে। কোন নারীকে বিয়ে করা যাবে, আর কোন নারীকে বিয়ে করা যাবে না, তা বলা হয়েছে বাইশ ও তেইশতম আয়াতে। চব্বিশতম আয়াতে বিয়ের সময় মোহর দেওয়াকে ফরজ সাব্যস্ত করা হয়েছে। পরিবারের প্রধান কে হবে, কে হবে পরিবারের দায়িত্বশীল এবং কেন? এ বিষয়ে যুক্তিভিত্তিক সারসংক্ষেপ আলোচনা স্থান পেয়েছে সুরার চৌত্রিশতম আয়াতে। সেই সঙ্গে ভালো নারীর গুণাবলিও এখানে বলে দেওয়া হয়েছে। আমানত রক্ষা ও বিচারকাজে নিরপেক্ষ থাকার কঠোর আদেশ দেওয়া হয়েছে আটান্ন নম্বর আয়াতে।
আপনার মতামত লিখুন :